নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে মোগরাপাড়া ইউনিয়নের এক তরুণীকে অপহরণের পর সপ্তাহব্যাপী আটক রেখে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে তার প্রতিবেশি হাসান নামে এক যুবকের বিরুদ্ধে।
ভুক্তভোগী ওই তরুণী গত ৩ দিন ধরে সোনারগাঁ থানার ওসি এম এ বারীকে অপহরণ ও ধর্ষণের ঘটনায় মামলা নেয়ার জন্য অনুরোধ করে আসছেন। কিন্তু ওই তরুণীর মামলার আবেদেনের পরিপ্রেক্ষিতে ধর্ষককে থানায় ধরে এনে ওসি দেড় লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে তাকে সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে চালান করে দেন বলে অভিযোগ করেন ওই তরুণী।
এ ব্যাপারে গত রবিবার পুলিশ হেডকোয়াটার্সে গিয়ে আইজিপি’স কমপ্লেইন মনিটরিং সেলে সোনারগাঁ থানার ওসির বিরুদ্ধে ঘুষের বিনিময়ে ধর্ষণ মামলার আসামিকে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ করেন।
অভিযোগপত্রে তিনি লেখেন, তার স্বামী কর্মসূত্রে প্রবাসে (সৌদী আরব) থাকার সুযোগে বিগত ৬ মাস যাবত তাকে নানাভাবে উত্যক্ত ও কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছে ইলিয়াসদী গ্রামের মো. শাহাবুদ্দিনের লম্পট ছেলে মো. হাসান। তার এসব কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তরুণীকে দেখে নেবে বলে হুমকি দিয়ে আসছিল হাসান। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৬ জানুয়ারি দুপুরে দড়িকান্দি এলাকা থেকে স্প্রে করে অজ্ঞান করে একটি প্রাইভেটকারে করে অপহরণ করে সাভারের অজ্ঞাতস্থানে নিয়ে যায় হাসান। দুই দিন পর জ্ঞান ফিরে আসলে তিনি নিজেকে একটি অন্ধকার ঘরে আবিষ্কার করেন। এ সময় লম্পট হাসান দেশিয় অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে টানা এক সপ্তাহ ধরে অসংখ্যবার ধর্ষণ করে একটি কক্ষে তালাবদ্ধ করে রাখে।
পরে গত ২৪ জানুয়ারি শুক্রবার কৌশলে পালিয়ে এক ব্যক্তির মোবাইল থেকে তার ভাইকে ফোন করেন ধর্ষিতা ওই তরুণী। খবর পেয়ে তার ভাই সাভার থেকে তাকে উদ্ধার করে সোনারগাঁ নিয়ে আসেন। ওই দিনই তিনি পরিবারের অভিভাবকদের নিয়ে থানায় অপহরণ ও ধর্ষণের ঘটনায় সোনারগাঁ থানায় মামলা করতে যান, কিন্তু সোনারগাঁ থানার ওসি এম এ বারী আমার মামলা না নিয়ে আমাকে একটি অভিযোগ করে যেতে বলেন। ধর্ষিতা জেনেও তিনি তাকে মেডিকেল টেস্টের জন্য হাসপাতালে পাঠাননি, মামলার আবেদনটিও গ্রহণ করেননি।
এদিকে, পুলিশ অভিযুক্ত হাসানকে শুক্রবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে সোনারগাঁও ইলিয়াসদী এলাকা থেকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। তাকে সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে কোর্টে চালান দেয় যাতে বিকালের মধ্যেই আসামির জামিন করে বাড়ি ফিরে আসতে পারেন। আসামির কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে ধর্ষণ ও অপহরণ মামলার আসামিকে সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে চালান করেন ওসি এস এ বারী। গত শনিবার সকালে কোর্টে চালান করলেও বিকালেই খালাস পেয়ে বাড়ি এসে তার বিরুদ্ধে থানায় করা অভিযোগ তুলে নিতে হুমকি দিচ্ছে। তা না হলে স্বপরিবারে হত্যা করে গুম করার হুমকি দিচ্ছে হাসান।
ভুক্তভোগী ওই তরুণী আইজিপিকে ঘটনাটি সুষ্ঠু তদন্ত করে অভিযুক্ত ওসি এম এ বারীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে এবং ধর্ষক ও অপহরণকারী লম্পট হাসানের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট ধারায় মামলা দিয়ে তাকে গ্রেপ্তারের আবেদন করেন।
সোনারগাঁও থানার ওসি এম এ বারীর কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, মঙ্গল হাসানের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পেয়ে মামলাটি রুজু করা হয়েছে। ধর্ষকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।